Tuesday, November 3, 2009

মেয়েদের টেনিস

আমরা যখন পুরুষদের টেনিস খেলা দেখি তখন কেবল টেনিসই দেখি, কিন্তু মেয়েদের টেনিস সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। পুরুষদের টেনিসে কেবল একটিই সবুজ খরগোশ নেটের এধারে ওধারে লাফায়, তাকে অনুসরণরত আমাদের চোখও ক্রমাগত এপাশ ওপাশ করতে থাকে। কিন্তু মেয়েদের টেনিসে অসংখ্য উজ্জ্বল বস্তু এক গোলকধাঁধাঁ তৈরী করে, মনে হতে পারে গোটা সৌরমণ্ডলই বুঝি দৃশ্যমান, তাতে মঙ্গল থেকে আর বুধকে আলাদা করা যাচ্ছে না। কেবল মধ্যবর্তী উজ্জ্বল পারাপারই নয়, সংখ্যাতীত ইস্পাত সেতুর মুখোমুখি হয়ে ভাবতে থাকি কোনটা স্বর্গের সিঁড়ি, আর কোনটা নরকের। তাদের চকচকে বীম আর অধিবাস্তব থীম এমন লাফিয়ে উঠে যে বর্গাকার সমস্ত কাঠামোই এক বিপজ্জনক জিরাফের মত তৃণভূমির অনেক উপরে দোলায়িত মগডালের সঙ্গে পরিভ্রমনরত মেঘদের দর্পহারী বিন্দুদের রচিত সিন্ধুনদ, অতিবন্ধুর সোনালী ব্রীজের উপর দাঁড়ানো মৃদুনীল নৈশ দূরত্বের ইশারা, ঈশ্বরীর বিজলীপ্রভ উপস্থিতির পাশেই দেবদূতদের খোলা তরবারির ঝলক। যেন আকাশ থেকে নেমে আসছে অজস্র বিদ্যুতের ফলা আমাদের দৃষ্টিদ্যুতি বাড়াতে, আশ্চর্য আলোকিত এক আয়তকার উঠোনে দ্যুতিময় চমকানো এক হলুদাভ সবুজ বলের গায়ে নৈশ প্রহরে অজস্র বাতিমালার নীলাভ এক রানওয়ের ছড়ানো চাদরে ঘুমপরীদের আনাগোনা আর স্বপ্নের আদান-প্রদান...

কবিতা আমাদের কী কাজে লাগে?

গিন্নীরা কবিতা ফোড়ন ছাড়াই দু’বেলা রান্না করে যাচ্ছেন সুস্বাদু ব্যঞ্জন। কর্তারা সেসব উদরাস্ত করে উদয়াস্ত আরামের দিবানিদ্রায় যাচ্ছেন। কবিতার পাশবালিশ ছাড়াই দিব্বি নাক ডাকছেন প্রতিদিন। শিশুরা শিশুতোষ উৎসাহে বল বগলদাবা করে ঝাঁপিয়ে পড়ছে মাঠে; পাশের জমিতে দরদালানও উঠছে তরতর করে।

দালান বানাতে পারে এমন সিমেন্ট বা সুরকী কবিতার নেই। কবিতা ছাড়াই নগরী ভরে যাচ্ছে কংক্রিট জঙ্গলে। কৃষক ধান ফলাচ্ছে মাঠে, কৃষাণী ফি বছর গণ্ডা গণ্ডা বাচ্চা বিয়োচ্ছে, বস্ত্রশিল্পী বয়ন পাখির মত সেলাই করছে সভ্যতার পোষাক। এরা কবিতার নামও শোনেনি। একটি বীজের চেয়ে অক্ষম কবিতা, একজন বুনন শিল্পীর চেয়েও মূল্য সংযোজনে অপটু। বীজ থেকে গাছ হয়, গাছ থেকে মহীরুহ। কবিতা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কের কোন কোষাগার ভরে?

তবে এসবের পেছনে যাঁর অল্য ইশারা তিনি তো মস্ত কবি। আর ভেতরে ভেতরে যে মুগ্ধকর খেলা ব্যাখ্যাতীত শিল্পসৌন্দর্যের, সে সবই কবিতা। অদৃশ্য এক বীজের মত যার পল্লব মাথা তোলে দশদিকে, ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র; প্রান্তরে দোলায়িত ধান, শিশুদের দৌঁড়, বুনন পাখির সেলাইশিল্প, কর্তার ঘুম আর গিন্নীর ব্যঞ্জনে।

কবির কাজ

কবিরা কত আর পাখি ও পালকের কবিতা লিখবেন, ফুল ও মধুর কাহিনী? রাধা ও কৃষ্ণের আখ্যান ধরে আছে সমগ্র মধ্যযুগের অযুত অর। আমরা আর কত ডালে ডালে বসাব কোকিল, নদীজলে ভাসাব বহুবর্ণা পালতোলা নৌকা, কত আর বুনে যাব ভ্রমরের নির্লজ্জ লোভ, ফুলের গোপন অভিলাষ?

আর কত ঢেউ চড়াব পদ্মার জ্যোৎস্নাবিধৌত সমতটে, মেঘনার বিস্তীর্ণ জলের সাম্রাজ্যে? মুখ তুলে দেখেছি কি নিরব কান্নাভরা জলমগ্ন নিরন্ন জনপদ? আর কত নক্ষত্রমঞ্জরী গেঁথে দেব আকাশগঙ্গায়, খৈয়ের মত তারাভরা রাত্রির নিচে যে বিপন্ন সহস্রের অধিবাস, তারা তো তারা নয়, খৈ খেতে চায়। কুম্ভকর্ণঘুম ভেঙে দেবতারা কি কখনো চোখ মেলে দেখেছেন পৃথিবী রাক্ষসদের দৈত্যমান লাফ?

কবির নাজুক নিব আজো মগ্ন হয়ে আছে স্রোতে ও স্ত্রোতে, রক্তের দোয়াতে কলম ডুবিয়ে কবি কবে লিখবেন খাঁটি পদ্য, নির্দয় জৈষ্ঠের মাহীন প্রান্তরে যে তাম্রলিপ্ত মানুষদের সারি তা বুনে দিবেন তার কবিতায়? নিরন্ন মানুষদের দীর্ঘ সারির মত কবির পঙক্তি কি দীর্ঘকায় হবে আর গর্জে উঠবে উদাসীন দেবতা ও রাক্ষসদের বিরুদ্ধে, এ গ্রহের দ্রোহে?